সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি
সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি ও আমরা শিক্ষক সমাজঃ
সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি কি তা জানার আগে আমাদের জানা দরকার সৃজনশীল কি?
সৃজনশীল কিঃ সৃজন : (বিশেষ্য) সংস্কৃতে সৃজঃ অর্থ সৃষ্টি করা। সৃজাঃ কারো দ্বারা সৃষ্টি করা সৃজিতঃ কারো দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে এমন। সৃজনশীলঃ সৃষ্টি করার ক্ষমতা সম্পন্ন। অতএব, সৃজনশীল কথাটির পূর্ণ অর্থ হলোঃ সৃষ্টি করার ক্ষমতা অর্জন করা। সৃজনশীল এর পারিভাষিক অর্থঃ কোন কিছু সুশৃঙ্খলভাবে ধাপে ধাপে প্রয়োজন মাফিক (যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু) উত্তমরূপে সৃষ্টি করা এবং তা কাজে লাগাবার যোগ্য ও কল্যাণকর পথে নিয়ে যাওয়া।
অর্থাৎ আমাদের শিক্ষার্থীদের তাদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ধাপে ধাপে পরিমাপের জন্য ও তাদের অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তবভিত্তিক কাজে লাগানোর জন্য সৃজনশীল পদ্ধতি।
তা হলে এখন আমরা জেনে নেই সৃজনশীল প্রশ্ন কি?
পাঠ্য বইয়ের জ্ঞানের আলোকে, একটি মৌলিক উদ্দীপকের সাহায্যে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা যাচাই করার জন্য যে প্রশ্ন তৈরি করা হয় তাকে সৃজনশীল প্রশ্ন বলে।
তা হলে এখন আমরা জেনে নেই সৃজনশীল প্রশ্ন এর প্রয়োজনীয়তা কি?
বৃটিশ আমলে আমাদের দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয় তা ছিলো নিত্যান্তই মুখস্থনির্ভর। এ শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দক্ষতা ছাড়া অন্য কোন দক্ষতা যাচাইয়ের সুযোগ ছিলো না। ফলে শিক্ষার্থীরা নোট মুখস্ত করে পরীক্ষা দিত। পরীক্ষার আগে সাজেশন ও ভালো নোট যোগাড় করে নিত এবং তা তোঁতা পাখির মতো মুখস্থ করে খাতায় হুবহু লিখে দিত। ফলে মুখস্থ করার ক্ষমতা যার যত বেশি থাকতো সে তত বেশি ভালো করত। যারা ভালো মুখস্থ করতে পারতো না তারা বিকল্প উপায় অবলম্বন করার চিন্তা করতো। আর বিকল্প চিন্তা থেকেই শিক্ষার্থীরা নির্ভরশীল হয়ে পড়তো গাইড-নোট বই এবং প্রাইভেট পড়ার প্রতি। এ ছাড়াও আরও ভয়ানক হুমকির কারণ হয়ে দেখা দেয় যে বিষয়টি তা হলো শিক্ষার্থীদের নকল করার দিকে মনোনিবেশ। কারণ যে সকল শিক্ষার্থী মুখস্থ করতে পারতো না তারা নকল করার দিকে মনোনিবেশ করত। ফলে পুরো জাতি আমরা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছিলাম। আর এসকল গাইড-নোট বই, মুখস্থনির্ভরতা, নকল প্রবনতার পিছনে যে কারণটি দায়ী তা হল তৎকালীন প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা। যে শিক্ষা ব্যবস্থায় ছিল না শিক্ষার কোন লক্ষ্য। ছিল না সৃজনশীলতা, জ্ঞানী ও দক্ষ জনসম্পদ তৈরির কোন ব্যবস্থার কথা।
তাইতো বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পন্ন আধুনিক বিজ্ঞানমনষ্ক বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণয়ন করেন শিক্ষানীতি -২০১০। আর এ শিক্ষানীতির আলোকে সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় আনয়ন করে ব্যাপক পরিবর্তন। পরিবর্তনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে আধুনিক, বিজ্ঞানমনষ্ক, যুগপোযোগী শিক্ষার্থী গড়ে তোলা। আর এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষাদান পদ্ধতির পরিবর্তন, প্রশ্নপদ্ধতির পরিবর্তন। প্রয়োজন একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী মূল্যায়ন পদ্ধতির। যার মাধ্যমে আমরা একজন শিক্ষার্থীকে বেঞ্জামিন ব্লুম এর বুদ্ধিবৃত্তিক ( Cognative), স্থরের সবগুলো ধাপ মূল্যায়ন করতে সক্ষম হবো। তাই দেশে শিক্ষার প্রকৃত মূল্যায়নের জন্য চালু হয়েছে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি।
সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা একজন শিক্ষার্থীর বেঞ্জামিন ব্লুম এর বুদ্ধিবৃত্তিক ধাপের ৪ টি ধাপ যথাঃ জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর চিন্তন দক্ষতার স্তরগুলো পরিমাপ করতে সক্ষম হই। ফলে শিক্ষার্থী শুধুমাত্র মুখস্থবিদ্যার মাধ্যমে যে মূল্যায়ন করা হতো তা দূরীভূত হয়। সেই সাথে শিক্ষার্থীর বুদ্ধিবৃত্তিক ধাপের সবগুলো মুল্যায়ন করা সম্ভবপর হয়। এর ফলে শিক্ষার্থী বিষয় সম্পর্কে অধিকতর জানার সুযোগ সৃষ্টি হয় সাথে সাথে সে তার অর্জিত জ্ঞান বাস্তবভিত্তিক কাজে লাগাতে সক্ষম হয়। ফলে শিক্ষার্থী তার শিক্ষাকে বাস্তবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়, এবং শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব হয়। যা একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে তুলে আধুনিক, বিজ্ঞানমনষ্ক, যুগপোযোগী শিক্ষার্থী হিসেবে।
সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিঃ
সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতিতে দুই প্রকারের দক্ষতাভিত্তিক প্রশ্ন করা হয়। একটি হচ্ছে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন এবং অপরটি হচ্ছে সৃজনশীল প্রশ্ন। সৃজনশীল প্রশ্নপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে চারটি চিন্তন দক্ষতা স্তর রয়েছে। স্তরগুলো হচ্ছে জ্ঞানস্তর, অনুধাবনস্তর, প্রয়োগস্তর ও উচ্চতর চিন্তন দক্ষতা। চিন্তন দক্ষতা এ চারটি স্তর কাঠিন্যের ক্রমানুসারে বিন্যস্ত করা হয়েছে।
জ্ঞান স্তরঃ
এটি চিন্তন দক্ষতার সর্বনিম্ন স্তর। এর মাধ্যমে আমরা একজন শিক্ষার্থীর মুখস্থবিদ্যা যাচাই করতে সক্ষম হই। এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর শিক্ষার্থী সরাসরি পাঠ্যপুস্থক থেকে দিয়ে থাকে। জ্ঞান স্তরের প্রশ্নের অন্তর্ভুক্ত বিষয় সমুহ হলঃ পাঠ্যপুস্থকের কোন শব্দ, বিশেষ তথ্য, তত্ত্ব, পদ্ধতি, প্রক্রিয়া, ধারনা , সুত্র ইত্যাদি।
অনুধাবন স্তরঃ
এটি হল ২য় স্তর। এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর বিষয় সম্পর্কে কতটুকু বুঝতে সক্ষম হয়েছে তা যাচাই করা হয়। শিক্ষার্থী যদি পাঠ্য বইয়ের কোন বিষয় বুঝে তা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয় তবে এই দক্ষতা অর্জন হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর তা মূল্যায়নের জন্য আমরা ব্যাখ্যা করতে পারবে, অনুধাবন করতে পারবে, সজ্জিত করতে পারবে এভাবে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।
প্রয়োগ স্তরঃ
এটি সৃজনশীল প্রশ্নের তৃতীয় স্তর। এটি নির্ভর করে ভালো মানের নতুন পরিস্থিতিযুক্ত উদ্দীপকের উপর। এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠ্যপুস্তকে থাকবে। আর পাঠ্যপুস্তকের তথ্য এবং এর অনুধাবন উদ্দীপকে বর্ণিত নুতন পরস্থিতিতে শিক্ষার্থী প্রয়োগ করবে। পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থী ভালোভাবে পড়লে সে বিষয়ে তার স্পষ্ট ধারনা হবে এবং শিক্ষার্থী সেটা নতুন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবে। আর তা মূল্যায়নের জন্য আমরা ব্যাখ্যা করতে পারবে, পার্থক্য করতে পারবে, সমাধান করতে পারবে এ ধরনের প্রশ্ন করে থাকি।
উচ্চতর দক্ষতার স্তরঃ
এটি সৃজনশীল প্রশ্নের চতুর্থ স্তর। এটি নির্ভর করে ভালো মানের নতুন পরিস্থিতিযুক্ত উদ্দীপকের উপর। এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠ্যপুস্তকে থাকবে। এ স্তরের প্রশ্নের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীর বিচার-বিবেচনা করার দক্ষতা, কোন বিষয় বা ঘটনা বিশ্লেষনের দক্ষতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা, মূল্যায়ন করার ক্ষমতা যাচাই করা হয়। এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য শিক্ষার্থীর পাঠ্য বইয়ে থাকবে এবং শিক্ষার্থী নতুন পরিস্থিতিতে তা ব্যবহার করে তার মূল্যায়ন করতে, বিচার-বিশ্লেষন করতে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। আর তা মূল্যায়নের জন্য আমরা বিশ্লেষণ করতে পারবে, সংশ্লেষন করতে পারবে, আলোচনা কর, মূল্যায়ন কর এ ধরনের প্রশ্ন করে থাকি।
তবে এখানে এ বিষয়টি অধিকতর বিবেচ্য যে, সৃজনশীল প্রশ্নের উদ্দীপক অবশ্যই মৌলিক হতে হবে। তা কোনভাবেই পাঠ্যবইয়ের হুবুহু কোন লাইন, ছবি, ডায়াগ্রাম তুলে দেওয়া যাবে না। সৃজনশীল প্রশ্ন করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে প্রশ্নের ক ও খ অংশের উত্তর উদ্দীপক বিবেচনায় না এনেও উত্তর দেওয়া সম্ভব হতে পারে, তবে গ ও ঘ অংশের উত্তর উদ্দীপক বিবেচনায় না এনে উত্তর দেওয়া কখনো সম্ভব হবে না।
সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির মূল বিষয় উদ্দীপক তৈরি। তাই কিভাবে একটি আদর্শ উদ্দীপক তৈরি করা যায়, তা জানা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। তাই যদিও আমার আলোচনায় উদ্দীপক তৈরির কৌশল ছিল না তথাপি একটু আলোচনা করছি, যার জন্য আমার লেখার পরিধিও বৃদ্ধি পাবে, সে জন্য আপনাদের কাছে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
উদ্দীপক তৈরির কৌশলঃ
উদ্দীপক হবে মৌলিক। পাঠ্যপুস্তকে যা সরাসরি থাকবে না। তাই আমরা উদ্দীপক হিসেবে সরাসরি পাঠ্য বইয়ের হুবুহু কোন অংশ, অনুচ্ছেদ বা লাইন, ছবি, চার্ট ইত্যাদি তুলে দিবো না। তবে বাংলা ১ম পত্রে কখনো কখনো গল্প, নাটক, উপন্যাসের বা কবিতার লাইন সরাসরি বা উদ্ধৃতি আকারে তুলে দেওয়া যেতে পারে।
উদ্দীপকের ভাষা হবে আকর্ষণীয়, সহেজে বোধগম্য এবং যতদুর সম্ভব সংক্ষিপ্ত। উদ্দীপকে অপ্রয়োজনীয় শব্দ বা বাক্য অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
উদ্দীপকের বিষয়বস্তু হবে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুর আলোকে এবং তা পাঠ্যপুস্তকের একটি অধ্যায় বা একাধিক অধ্যায়ের সমন্বয় করেও তৈরী করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে অধ্যায়গুলোর বিষয়বস্তু হতে হবে একই। যেমন ৬ষ্ট শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিষয়ে জীব বিজ্জান, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান আছে, এক্ষেত্রে পাঠ্য বইয়ের যে কোন একটি অংশ থেকে উদ্দীপক তৈরি করতে হবে এবং প্রশ্ন তৈরির ক্ষত্রেও একই নিয়ম অনুসরন করতে হবে। যেমন জীব বিজ্ঞান অংশ থেকে উদ্দীপক তৈরি করলে জ্ঞান ও অনুধাবনের প্রশ্ন জীব বিজ্ঞান অংশ থেকেই করতে হবে।
উদ্দীপক প্রণয়নের সময় দক্ষতার স্তর সমুহ বিবেচনায় রেখে ও পাঠ্যপুস্তকের অর্জিত জ্ঞানকে ঘটনার সাথে মিলিয়ে উদ্দীপক তৈরী করতে হবে। উদ্দীপক কখনই এমন হবে না যার জ্ঞান পাঠ্যপুস্তকের মাঝে নেই। অর্থাৎ পাঠ্যপুস্তকে জ্ঞান নেই এমন নতুন পরিস্থিতি দিয়ে উদ্দীপক তৈরি করা যাবে না।
উদ্দীপক তৈরির জন্য আমরা পত্র-পত্রিকা, প্রবন্ধ, রেডিও বা টেলিভিশনে প্রচারিত বিভিন্ন তথ্য বা ঘটনা, প্রামান্য চিত্র ইত্যাদি উদ্দীপকের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এ ছাড়াও বইয়ের সাথে মিলে কিন্তু বইয়ে নেই, এমন ছবি মানচিত্র, গ্রাফ ও উদ্দীপক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এই বিষয়টি অবশ্যই মনে রাখতে হবে, উদ্দীপকে কোন প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দেওয়া থাকবে না। তবে উদ্দীপক এমন হবে যেন শিক্ষার্থী উত্তর দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় হিন্টস উদ্দীপক থেকে পায়।
উদ্দীপক তৈরির সময় আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, কোন জাতি, ধর্ম, গোত্র , রাজনৈতিক আদর্শকে, দেশের স্বাধীনতা, ভাষা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে আঘাত করে এমন উদ্দীপক বা প্রশ্ন করা যাবে না।
উপরের বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে উদ্দীপক তৈরি করলে আশা করি একটি মানসম্পন্ন উদ্দীপক তৈরি করা সম্ভব হবে। তাই আমার শিক্ষক/শিক্ষিকা ভাই –বোনদের উদ্দেশ্য বলবো আপনারা অনুগ্রহ করে উদ্দীপক তৈরির সময় উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে উদ্দীপক তৈরী করবেন।
আমাদের করণীয়ঃ
সৃজনশীল প্রশ্ন পত্র প্রণয়ন ২০০৮ থেকে শুরু হয়, যদিওবা তখন এর নাম ছিলো কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন। যা পরবর্তীতে ২০১০ সালে এর নামকরণ করা হয় সৃজনশীল প্রশ্ন। ২০১০ সালে সর্বপ্রথম বাংলা -১ম পত্র ও ধর্ম শিক্ষা বিষয়ের উপর সৃজনশীল প্রশ্নে সারা দেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সাল থেকে মাধ্যমিকের প্রায় সকল বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন-পত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায়ও সৃজনশীল প্রশ্নে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তথাপি আজ দশ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রশ্ন জাগছে, আমরা শিক্ষক সমাজ কি প্রকৃত সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরী করতে সক্ষম হচ্ছি। আমি একজন শিক্ষক, মাষ্টার ট্রেইনার , বোর্ডের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কারী ও মোডারেটর হিসেবে বলবো যে, আমরা এখনও মান সম্মত সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করতে সক্ষম হতে পারিনি। তার যথাযথ কারণও রয়েছে। কারণগুলো আমাদের জানা যেমন জরুরী তেমনি এ সকল কারনের সমাধান করাও ততটাই জরুরী।
কারণঃ
১। আমরা যারা বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছি, আমরা প্রায় সকলেই বৃটিশ আমলের মুখস্থ নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিচিত, শুধু তাই নয় আমরা সেই ধাঁচই এখনও আমাদের মজ্জায় ধরে রেখেছি। তাই পুরাতনকে সহজে ত্যাগ করতে পারছি না।
২। সৃজনশীল প্রশ্ন-পত্রে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে, তাঁতে প্রকৃত সৃজনশীল প্রশ্ন করা হচ্ছে কি না তার কোন কার্যত মনিটরিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ফলে আমরা দায়সারা গোছের প্রশ্ন করে যাচ্ছি।
৩। সৃজনশীল প্রশ্নের প্রতি শিক্ষকদের অকারণ ভিটি।
৪। সহজলভ্য গাইড-বই বা নোট বই। যা শিক্ষকদেরকে সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করতে বাঁধা সৃষ্টি করছে।
৫। বর্তমানে ঘন ঘন পাঠ্যসূচীর পরিবর্তনও শিক্ষকদেরকে সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করতে নিরুৎসাহিত করছে।
পরিত্রানের উপায়ঃ
১। সৃজনশীল প্রশ্ন পত্রের উপর অধিকতর প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহণ। কারণ শিক্ষকদের মধ্য থেকে সৃজনশীলের ভীতি দূর করতে প্রশিক্ষনের কোন বিকল্প নেই। আমার মনে হয় শিক্ষকদেরকে সৃজনশীলের উপর সাত থেকে ১০ দিনের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাদের ভীতি দূর হবে, এবং প্রশ্ন প্রণয়ন করতে সক্ষম হবে।
২। প্রশিক্ষণের জন্য আমরা এখন মুক্তপাঠকে ব্যবহার করতে পারি। মুক্তপাঠে সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরির উপর কোর্স করা যেতে পারে, যাতে করে শিক্ষকগণ সাত বা দশ দিনের প্রশিক্ষনের পর মুক্তপাঠ থেকে তাদের কোর্সগুলো পুণঃপুণঃ দেখে নিতে পারে। এতে করে শিক্ষকদের দক্ষতা ও ভীতি দুয়ই দূর হবে।
৩। বিদ্যালয়ে অভ্যন্তরীন পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্ন মান সম্মত হচ্ছে কি- না তার জন্য বিদ্যালয় ভিত্তিক কার্যত মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৪। শিক্ষকদেরকে উৎসাহিত করার জন্য যারা মান সম্মত সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করবে তাদেরকে পুরষ্কৃত করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
আর এ সকল বিষয় সামনে রেখে আমরা যদি এগুতে পারি, তবেই হয়তোবা প্রকৃতপক্ষে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু করার আসল উদ্দেশ্য সফল হবে। আর আমরা পাব এক আদর্শ যুগোপযুগী, বিজ্ঞান্মনষ্ক ও ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপুরনে সক্ষম এক শিক্ষিত জাতি।